আসসালামু আলাইকুম। আজকের টপিক হচ্ছে লোডশেডিং। বর্তমানে লোডশেডিং আমাদের দেশে চরম আকার ধারণ করেছে। লোডশেডিং কেনো হচ্ছে আর এর কারনে জনজীবনে যেসব দুর্ভোগ নেমে এসেছে সেই বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
হঠাৎ করেই বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভ্রাট চরম আকার ধারণ করেছে। দিনে-রাতে অসংখ্যবার লোডশেডিং হচ্ছে। সরকারের দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশে ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জন করেছে। কিন্তু তারপরও কেনো সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীসহ সমগ্র দেশে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং হচ্ছে সে সম্পর্কে আজ আলোচনা করা হবে।
লোডশেডিং কেনো হচ্ছে
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে গ্যাসের সরবরাহ কমে গেছে। এর কারণ হলো বিশ্ববাজারে আবারও গ্যাসের দাম বেড়েছে। এছাড়া জ্বালানি তেলের দাম আগের চেয়ে বেশি। কয়েকদিন আগেও বিশ্ববাজারে প্রতিইউনিট গ্যাসের দাম ছিল ২৫ ডলার। আর বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৩৮ ডলার। তাই সরকার এখন প্রাকৃতিক গ্যাস কিনছে না। গত কয়েকদিনে বাংলাদেশে গ্যাস সরবরাহ ৩০ শতাংশ কমে গেছে। সে কারণেই মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেক কম হচ্ছে। ফলে লোডশেডিংও বেড়েছে অনেক বেশি। জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন দিনে ১০০ কোটি টাকার বেশি লোকসান করছে। তাই গ্যাস এবং তেল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পুরোদমে চালাতে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এসব কারণে অতিরিক্ত লোডশেডিং করা হচ্ছে।
তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদের প্রভাব
বাংলাদেশের তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশন পেট্রোবাংলা বলছে দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৭০ কোটি ঘনফুট। সাধারণত প্রতিদিন গড়ে ৩০০ কোটি ঘনফুট এর মত গ্যাস সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বিগত কয়েকদিন ধরে দিনে মাত্র ২৭৫-২৮০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। কিছুদিন ধরেই ধাপে ধাপে এই সরবরাহ কমানো হচ্ছিলো। নতুন করে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি না কেনা হলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এখন শুধু দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় ওমান ও কাতার থেকে আসা এলএনজির সরবরাহ সচল রয়েছে। এছাড়া পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে এখন দেশে উৎস থেকে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
অতিরিক্ত লোডশেডিং কেনো হয়।
কিভাবে মেটাভার্স বিশ্ব পরিবর্তন করবে।
গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্রাহকেরা রান্নার জন্য একদমই গ্যাস পাচ্ছে না। বেশ কিছু এলাকায় গ্যাসের চাপ অনেক কমে গেছে। এছাড়া সাভার, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ এলাকার শিল্পকারখানাগুলোতে গ্যাসের অভাবে উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। তবে গ্যাসের অভাবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয়েছে বিদ্যুৎ খাতে। গ্যাস চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অধিকাংশই বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ফলে দিনে গড়ে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। সেজন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোও চাহিদামত বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। তাই গত কয়েকদিন থেকে সারাদেশে লোডশেডিং বাড়ানো হয়েছে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দিনে গড়ে ৫ বারের বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ আসার আধা ঘণ্টারও কম সময়ে আবার লোডশেডিং করা হচ্ছে। তবে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন এলাকায় সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
জিপিএস ট্র্যাকিং কি এবং কিভাবে কাজ করে।
চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ সরবরাহ
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। দেশের প্রায় ৫৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় পল্লী বিদ্যুতের মাধ্যমে। এই সংস্থাটি দিনে ৮৫১ মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ পাচ্ছে। সারাদেশে লোডশেডিং করার এটি একটি বড় কারণ। সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে ময়মনসিংহ বিভাগের জেলা গুলোতে। এছাড়া রংপুর, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, বগুড়া, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর জেলার গ্রাহকেরা দিনে কমপক্ষে ৫-৬ ঘন্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেনা। তবে কোনো কোনো এলাকায় দিনের 14 ঘণ্টার মতো লোডশেডিং হওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। রাজধানীতে বিদ্যুৎ সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান “ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি” এবং “DPDC” প্রয়োজনের তুলনায় যথাক্রমে ৩০০ এবং ১৫০ মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ পাচ্ছে। DPDC এর চাহিদা ১৬০০ মেগাওয়াট। কিন্তু এতে সরবরাহ করা হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। অন্যদিকে DESCO এর চাহিদা রয়েছে দিনে ১ হাজার মেগাওয়াট, কিন্তু তারা পাচ্ছে ৮৫০ মেগাওয়াট। সেজন্য ঢাকা শহরেও অতীতের তুলনায় অনেক বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। এদিকে জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ঘাটতির কারণে বর্তমান সময়ে অধিক লোডশেডিং হচ্ছে।
সচেতনতার অভাব
Sea weed বা সমুদ্র শৈবালের উপকারিতা।
অপ্রয়জনে বিদ্যুৎ খরচের ফলে বিদ্যুৎ অপচয় দিন দিন বেড়েই চলেছে। অনেক অসচেতন বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী অপ্রজয়নে লাইট, ফ্যান, ফ্রিজ, টিভি বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি চালু রাখে। যার ফলে অতিরিক্ত মাত্রায় বিদ্যুৎ অপচয় হয় এবং লোডশেডিং এর মাত্রা বেড়ে যায়।